সিংগাইর (মানিকগঞ্জ), ৩০ নভেম্বর ২০১৫ (বাংলা-নিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকম): তফসিল ঘোষণার পর থেকে মানিকগঞ্জের সিংগাইর পৌরসভার সব জায়গায় এখন নির্বাচনী আমেজ। এ্কই সঙ্গে প্রধান দুই দলের প্রার্থী নির্বাচনেও ভেতরে ভেতরে চলছে দলাদলি। তবে এ ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের চেয়ে বিএনপি কিছুটা সুবিধাজনক অবস্থানে। কেননা, দলের মনোনয়ন পাওয়া নিয়ে আওয়ামী লীগে অভ্যন্তরীণ কোন্দল মাথা চাড়া দিয়েছে। মনোনয়ন না পেলে স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেয়ার কথা জানিয়েছেন দলের এক সম্ভাব্য প্রার্থী।
বিএনপির দুই সম্ভাব্য প্রার্থী মনোনয়নের ব্যাপারে অনেকটাই নিশ্চুপ থেকে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে পৌর নির্বাচন হচ্ছে বলে অন্যবারের চেয়ে এবার প্রচার-প্রচারণায় বেশি উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। প্রার্থী থেকে শুরু করে ভোটারাও এ নিয়ে স্বতঃস্ফূর্ত।
সম্ভাব্য প্রার্থীদের দলীয় প্রধান থেকে শুরু করে মন্ত্রী-এমপির ছবিসংবলিত ব্যানার, পোস্টার, বিলবোর্ড ও তোরণে ছেয়ে গেছে পৌরসভার নির্বাচনী এলাকা। পৌরবাসীর কাছে নানা সমস্যার সমাধান ও নতুন নতুন প্রতিশ্রুতি নিয়ে নিজেদের উপস্থাপন করছেন তারা।
প্রচার-প্রচারণায় পিছিয়ে নেই কাউন্সিলর ও মহিলা কাউন্সিলররাও। নিজ নিজ দলের সমর্থনের আশায় শতাধিক প্রার্থীর দৌড়ঝাঁপে মাঠ সরগরম।
মেয়র প্রার্থীদের মতো তারাও উঠান বৈঠক ও সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে ভোটারদের মন জয় করার চেষ্টা করছেন। সব মহলে এখন একটাই আলোচনা, কে পাচ্ছেন বড় দুই দলের মনোনয়ন বা সমর্থন।
বিএনপি থেকে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন বর্তমান মেয়র সিংগাইর উপজেলা যুবদলের সভাপতি অ্যাডভোকেট খোরশেদ আলম ভূইঁয়া জয় ও জেলা জাসাস নেতা খান মোহাম্মদ রুমী।
তবে, দল থেকে বর্তমান মেয়র জয়কে মনোনয়ন দেয়া হচ্ছে বলে দলীয় বিভিন্ন সূত্রে আভাস পাওয়া গেছে।
আর ক্ষমতাসীন দল থেকে সাবেক মেয়র মীর মো. শাজাহান ও সাবেক উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আবু নঈম বাশার ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
বাশার স্থানীয় এমপি কণ্ঠশিল্পী মমতাজ বেগমের প্রথম স্বামী প্রয়াত বাউলশিল্পী আব্দুর রশিদ সরকারের প্রথম স্ত্রীর ছেলে। মমতাজ বেগমের আশীর্বাদ নিয়ে তিনি প্রতিদিন সভা-সমাবেশ করে যাচ্ছেন।
অন্যদিকে, মীর মো, শাজাহান আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় যুব ও ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক দেওয়ান শফিউল আরেফিন টুটুলের আশীর্বাদ নিয়ে মাঠে নেমেছেন।
এ কারণে মমতাজ বেগম ও দেওয়ান শফিউল আরেফিন টুটুল গ্রুপের অভ্যন্তরীণ বিরোধ আরো জটিল আকার ধারণ করেছে।
স্থানীয় বিভিন্ন পর্যায়ের লোকজনের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, ২০০১ সালে গঠিত হয় সিংগাইর পৌরসভা। ২০০২ সালের ৩০ জুন প্রথম নির্বাচনে বিএনপি-সমর্থিত প্রার্থী প্রয়াত উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক দেওয়ান মোজহারুল হক মহরকে ২৯ ভোটে পরাজিত করে মেয়র নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগ-সমর্থিত প্রার্থী তৎকালীন ইউপি চেয়ারম্যান মীর মো. শাহজাহান।
২০১১ সালের ১৭ জানুয়ারি দ্বিতীয় নির্বাচনে মীর মো. শাজাহান দলীয় সমর্থন থেকে বঞ্চিত হলে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেন। এ নির্বাচনে বিএনপির সমর্থিত প্রার্থী অ্যাডভোকেট খোরশেদ আলম ভূঁইয়ার কাছে ৩০৪ ভোটে হারেন তিনি।
আওয়ামী লীগের প্রার্থী প্রয়াত যুবলীগ নেতা এম এম আলমগীর পেয়েছিলেন মীর মো. শাজাহানের অর্ধেকের কম ভোট।
মীর মো. শাজাহান বলেন, “বিএনপির শাসনামলে পৌরসভার প্রথম নির্বাচনে মেয়র হিসেবে বিজয়ী হওয়ায় দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা আমাকে মানিকগঞ্জের মানিক আখ্যা দিয়েছিলেন।”
আগের দুটি নির্বাচনের ফল ও বর্তমান জনমত বিচার বিশ্লেষণ করে দলীয় হাইকমান্ড তাকেই মনোনয়ন দেবে বলে প্রত্যাশা করেন মীর মো. শাজাহান। তিনি বলেন, তা না হলে নাগরিক সমাজের ব্যানারে মেয়র প্রার্থী হবেন তিনি।
আবু নঈম মোহাম্মদ বাশার বলেন, “প্রয়াত বাউলসম্রাট আব্দুর রশিদ সরকার দল ও এলাকার মানুষের কল্যাণে আজীবন কাজ করে গেছেন। বাবার অনুপ্রেরণায় বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করে ছাত্রজীবন থেকে দলীয় কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি অসহায় মানুষের সেবা ও এলাকার উন্নয়নে ভূমিকা রেখেছি।” দল তাকেই মনোনয়ন দেবে এমন আশা করে তিনি বলেন, মনোনয়ন না পেলে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ করবেন তিনি।
এদিকে, দলের সিদ্ধান্ত যা-ই হোক, বসে নেই বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরা। আওয়ামী লীগকে ফাঁকা মাঠে গোল দেয়ার সুযোগ দিতে নারাজ তারা। যেকোনো মূল্যে নির্বাচনে তারা মাঠে থাকবেন।
বর্তমান মেয়র অ্যাডভোকেট খোরশেদ আলম ভূঁইয়া জয় বলেন, “গত পাঁচ বছরে পৌরসভায় অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে। সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দল ও মতের ঊর্ধ্বে উঠে জনগণের সেবা করার চেষ্টা করেছি।” এলাকার উন্নয়ন ও জনমতের কথা বিবেচনা করে দল তাকে মনোনয়ন দিয়ে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখবে বলে আশা প্রকাশ করেন মেয়র জয়।
খান মোহাম্মদ রুমী জানান, দল থেকে তিনি মনোনয়ন পাওয়ার আশা করছেন। মনোনয়ন না পেলে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ করবেন বলে জানান তিনি।
এ ব্যাপারে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট গোলাম মহীউদ্দিন জানান, প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণা ও জনপ্রিয়তা পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। হাইকামান্ড জনমতের ভিত্তিতে দুজনের মধ্যে থেকে যোগ্য প্রার্থীকেই মনোনয়ন দেবে। সৌজন্যে ঢাকাটাইমস