কুমিল্লা প্রতিনিধিঃ মুরাদনগর উপজেলার দারোরা ইউনিয়নের পদুয়া গ্রামের জব্বার আলী ওরফে রুক্কু মিয়া চিিহ্নত যুদ্ধাপরাধী হয়েও তার পুত্র জামাল হোসেন মুক্তিযোদ্ধা কোটায় পুলিশ সার্জেন্ট পদে চাকরি করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ইতিমধ্যে তার আরেক ছেলে মহসীন মিয়াও মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ৩৪তম বিসিএস প্রশাসনে চাকরি নেওয়ার অপচেষ্টা চালাচ্ছে বলে জানা গেছে। বিষয়টি জানাজানি হলে এলাকার মুক্তিযোদ্ধাসহ সর্বমহলে তোলপাড় চলছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পদুয়া গ্রামের মৃত আলীম উদ্দিনের ছেলে জব্বার আলী ওরফে রুক্কু মিয়া ১৯৭১ সালে যুদ্ধচলাকালীন সময়ে পাক বাহিনীকে বিভিন্ন ভাবে সহায়তা করেন। ওই সময় সে পাক বাহিনীর সাথে খুন, ধর্ষন, অগ্নিসংযোগ, লুটতরাজ ও মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের উপর অমানুষিক নির্যাতন করেছিল। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালের ১৪ এপ্রিল যুদ্ধাপরাধী জব্বার আলী ওরফে রুক্কু মিয়ার বিরুদ্ধে দন্ডবিধি ১৪৮/৩৭৯/৩৮০/৩০৭ ধারায় মুরাদনগর থানায় একটি মামলা হয় (যার নং-১২/জিআর ২৭৪/১২)। পুলিশ দীর্ঘ তদন্ত শেষে ঘটনা সত্যতার অভিযোগপত্র প্রদান করলে আদালত কর্তৃক গৃহীত হয়। পরে বিচারের জন্য মামলাটিকে কোলাবরেটরস স্পেশাল ট্রাইব্যুনালে স্থানাস্তর করেন (যার নং ১২৭/৭২)। ওই মামলায় দীর্ঘ ১৮ মাস জেলখানায় থাকার পর জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাধারণ ক্ষমায় যুদ্ধাপরাধী জব্বার আলী ওরফে রুক্কু মিয়া ছাড়া পান। বিষয়টি যুদ্ধাপরাধ (কুমিল্লা, ব্রাক্ষনবাড়িয়া, চাঁদপুর) দলিলপত্র অপারেশন কিল এন্ড বার্ণ নামে প্রকাশিত ১৭৫ নম্বর পৃষ্ঠায় লিপিবদ্ধ হয়েছে। একজন চিিহ্নত যুদ্ধাপরাধী হিসেবে দীর্ঘদিন চুপচাপ থাকার পর কিছু নামধারী অসাধু মুক্তিযোদ্ধার সহায়তায় অদৃশ্য ক্ষমতার খুঁটির জোরে সেও মুক্তিযোদ্ধা বনে যান। মুক্তিযোদ্ধা হয়েই জব্বার আলী ওরফে রুক্কু মিয়া অনুমানিক ১৯৯৮/৯৯ সালে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় তার পুত্র জামাল হোসেন পুলিশ সার্জেন্ট পদে চাকরি লাভ করে বর্তমানে টাঙ্গাইলে কর্মরত রয়েছেন। ঘটনাটি জানাজানি হলে তৎকালীন উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার এডভোকেট সামসুল হক ফিরোজ ২০১২ সালের ১৯ জানুয়ারী যুদ্ধাপরাধী জব্বার আলী ওরফে রুক্কু মিয়ার সম্মানী ভাতা বন্ধ করে দেন। একই সাথে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন ও রাষ্টীয় অর্থ উদ্ধারের জন্য বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের মহাসচিব (প্রশাসন) এর নিকট লিখিত অভিযোগ করেন। যুদ্ধাপরাধী জব্বার আলী ওরফে রুক্কু মিয়ার বন্ধ হওয়া সম্মানী ভাতা নতুন করে চালু করার পাঁয়তারা করছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিল কর্তৃক চাহিত রাজাকারের তালিকায়ও যুদ্ধাপরাধী জব্বার আলী ওরফে রুক্কু মিয়ার নাম রয়েছে বলে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সূত্রে জানা গেছে। ইতিমধ্যে তার আরেক ছেলে মহসীন মিয়াও মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ৩৪তম বিসিএস প্রশাসনে চাকরি নেয়ার অপচেষ্টার সংবাদে এলাকার মুক্তিযোদ্ধারা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। যুদ্ধকালীন ও দারোরা ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার রোশন আলী, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সদস্য মোহাম্মদ আলী ও মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল করিম মোল্লা মঙ্গলবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে দেখা করে যুদ্ধাপরাধী জব্বার আলী ওরফে রুক্কু মিয়া একজন চিিহ্নত যুদ্ধাপরাধী হয়েও কি ভাবে মুক্তিযোদ্ধা বনে যান এবং কি করে মুক্তিযোদ্ধা সনদ লাভ করেন এ কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন এবং উক্ত বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে একটি লিখিত অভিযোগ দেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মনসুর উদ্দিন বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন বলে মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্বস্ত করেন।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধী জব্বার আলী ওরফে রুক্কু মিয়ার সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার হারুনুর রশীদ জানান, জব্বার আলী ওরফে রুক্কু মিয়া যুদ্ধাপরাধী হিসেবে প্রকাশ পাওয়ার পর আমি আসার আগেই পূর্ববর্তী কমান্ডার তার সম্মানী ভাতা বাতিল করে দেন। সে পূনরায় ভাতা পাওয়ার কোন সুযোগ নেই। ইতিমধ্যে তার নাম রাজাকারের তালিকায়ও দেওয়া হয়েছে।