উচ্ছ্বাসে ভাসছে বাংলাদেশ। আনন্দে হাসছে লক্ষ-কোটি ক্রিকেটপ্রেমী। ‘এ আমার বাংলাদেশ, এ আমার অহংকার।’ আজ আর বুক ফুলিয়ে বলতে নেই কোনো মানা। বহু প্রতীক্ষার, বহু আশার ফল ঘরে তুলেছে লাল-সবুজের পতাকাবাহীরা। গড়েছে নতুন ইতিহাস। জুটেছে হাজারও বাহবা। হবে না কেনো, আজকের আগে ওজিদের বিপক্ষে চারটি টেস্ট খেলে, চারটিতেই হেরেছে বাংলাদেশ। এই প্রথম অস্ট্রেলিয়া বধের গল্প লিখল চণ্ডিকা হাথুরুসিংহের ছাত্ররা।
বাংলাদেশে আসা নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার তালবাহানা কম হয়নি। বিগত কয়েক বছর আসবে আসবে বলেও কয়েকটা সফর বাতিল করে ওজিরা। ২০১৫ সালে নিরাপত্তা শঙ্কায় বাংলাদেশ সফর বাতিল করে অস্ট্রেলিয়া। এছাড়া ২০১১ সালে বাংলাদেশ সফর করে অস্ট্রেলিয়া। সেবার এফটিপিতে পূর্ণাঙ্গ সিরিজ থাকলেও শুধু তিনটি ওয়ানডে খেলেই দেশে ফেরত যায় দলটি।
শেষমেশ দুই টেস্টের জন্য বাঘের ঢেরায় পা রাখে ক্যাঙ্গারুর দল। তখনকার বাংলাদেশকে নিয়ে অস্ট্রেলিয়া না ভাবলেও এখন ঠিকই ভাবছে। বল মাঠে গড়ানোর আগে সাবেক ওজি ক্রিকেটারদের থেকে ভেসে আসা মন্তব্যে তেমন সুবাসই মিলল। তাছাড়া দুই পক্ষের ক্রিকেটারদের পাল্টা-পাল্টি বক্তব্য, দিয়েছিল যুদ্ধের আগাম বার্তা। মাঠে নেমে হাড়েহাড়ে বুঝল এটা কোন বাংলাদেশ। টের পেল সাকিবের তেজ কতখানি।
দুই ইনিংস মিলে ১০ উইকেট গিলেছেন সাকিব। ব্যাট হাতেও উজ্জ্বল তিনি। প্রথম ইনিংসে দলের দুঃসময়ে তার করা ৮৪ রান, লড়াইয়ে পুঁজি পায় বাংলাদেশ। খারাপ করেননি অন্যরাও। এক একজন টাইগার ক্রিকেটার লড়েছেন দাঁতে দাঁত লাগিয়ে। তবে অস্ট্রেলিয়াকে চূর্ণবিচূর্ণ করতে একটু বেশিই অবদান তামিম, মিরাজ এবং তাইজুলের।
এর আগে সিরিজের প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের দেয়া ২৬০ রানের জবাবে ব্যাট করতে নেমে সাকিব-মিরাজদের ঘূর্ণিতে ২১৭ রানেই গুটিয়ে যায় অস্ট্রেলিয়া। দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশ করে ২২১ রান। তাতে জয়ের জন্য ওজিদের লক্ষ্যমাত্রা দাঁড়ায় ২৬৫।
টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে প্রথম দিনের শুরুতে বড়সড় ধাক্কা খায় বাংলাদেশ। স্কোর বোর্ডে ১০ রান জমা পড়তেই তিন উইকেট খোয়ায় স্বাগতিকরা। এক এক করে প্রথম সারির তিন ব্যাটসম্যান সৌম্য (৮), ইমরুল (০) আর সাব্বির (০) ফিরে যান সাজঘরে। তিন উইকেটই ঝুলিতে পুরেছেন ওজি পেসার প্যাট কামিন্স। চতুর্থ উইকেট জুটিতে শুরুর ধাক্কা সামাল দেন সাকিব-তামিম।
শতকের পথে থাকা তামিম ইকবালকে থামিয়ে ১৫৫ রানের জুটি ভাঙেন পার্ট টাইম স্পিনার ম্যাক্সওয়েল। আর ৮৪ রান করে নাথান লায়নের শিকার হয়ে বিদায় নেন সাকিব। ৭১ রান করে তামিম এবং ৮৪ রানে সাকিব ফিরলেও নিজেদের ৫০তম টেস্টে বীরত্বের ছাপই রেখে যান দুজন। ১৪৪ বলে ৫ চার ৩ ছয়ে ৭১ রান আসে তামিমের ব্যাট থেকে। টাইগার অলরাউন্ডার সাকিব করেন ১৩৩ বলে ১১ চারে ৮৪ রান।
সাকিব-তামিম আউট হওয়ার পর বাকিরা তাদের নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি। তবে খানিকটা সময় লড়াই করেছেন নাসির (২৩) ও মিরাজ (১৮)। শেষ পর্যন্ত প্রথম ইনিংসে ২৬০ রানেই অলআউট হয় বাংলাদেশ। অজি বোলারদের পক্ষে ৩টি করে উইকেট শিকার করেন প্যাট কামিন্স, নাথান লায়ন, অ্যাস্টন অ্যাগার। একটি উইকেট দখল করেন ম্যাক্সওয়েল। সৌজন্যে ঢাকাটাইমস