সোহেল রানা-বালিয়াকান্দি (রাজবাড়ী), ২০ আগষ্ট, ২০১৬ইং (বাংলা-নিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকম): কালজ্বয়ী উপন্যাস “বিষাদ সিন্ধুর” রচয়িতা সাহিত্যিক মীর মশাররফ হোসেনের স্মৃতিকে অম্লান রাখতে রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার নবাবপুর ইউনিয়নের পদমদী মীর মশাররফ হোসেন স্মৃতি কমপ্লেক্স প্রতিষ্ঠা করে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়। স্মৃতি কমপ্লেক্সের অদুরে সোনাপুরে ১৯৯৪ সালে এলাকাবাসী মীর মশাররফ হোসেন কলেজ প্রতিষ্ঠা করে। প্রতিষ্ঠাকালীন সময় বিচ্ছিন্নবাদী একটি গ্রুপ মীর মশাররফ হোসেনের নামে কলেজ প্রতিষ্ঠার বাধা হয়ে দাাঁড়ায়। এতে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের সুচনা হয়। সেই সময়ের সংঘর্ষে শতাধিক যুব-বৃদ্ধ আহত হয়ে হাসপাতালেও গিয়েছিল। তারপরও মীরভক্ত মানুষের আন্তরিক প্রচেষ্টায় প্রতিষ্ঠিত হয় মীর মশাররফ হোসেন কলেজ। কলেজ প্রতিষ্ঠায় বর্তমান বালিয়াকান্দি উপজেলা চেয়ারম্যান মোঃ আবুল কালাম আজাদ অগ্রণী ভুমিকা পালন করেন।
শুরুতেই চালু হয় বিজ্ঞান, মানবিক ও বানিজ্য শাখা। ১৯৯৬ সালে কলেজটির শতভাগ শিক্ষার্থী সাফল্যের সাথে পাশ করে। চারিদিকে সুনাম ছড়াতে থাকে। এভাবেই যাত্রা শুরু হয়েছিল মীর মশাররফ হোসেন কলেজের। সাফল্যের সাথে এগিয়ে চলা কলেজটি একসময় বিএম শাখা খোলার অনুমতি পায়, পায় ডিগ্রি (পাস) খোলার অনুমতি। মান সম্মত শিক্ষা ব্যবস্থা চালু থাকায় এখানকার শিক্ষার্থীরা প্রতি বছরই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশ-বিদেশের খ্যাতমান বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চ শিক্ষার সুযোগ পায়।
বর্তমান কলেজটির শিক্ষার্থী সংখ্যা ২ হাজারের অধিক। শিক্ষক-কর্মচারীর সংখ্যা ৬৩জন। ৩টি দ্বিতল ভবন, ৩টি টিনসেট ঘরে কলেজটির পাঠদান কার্যক্রম চলে। এর সমৃদ্ধ লাইব্রেরী, সুসজ্জিত বিজ্ঞানাগার ও ভুগোল বিভাগ আছে। ক্যাম্পাসের পরিবেশে মনোমুগ্ধকর। খেলার মাঠ প্রশস্থ। চারিদিকে ফুলে ফুলে সুশোভিত।
মীর মশাররফ হোসেন স্মৃতি পাঠাগার নামে এতে সমৃদ্ধশালী একটি লাইব্রেরী আছে। মীর সাহেব সম্পর্কে জানার এটিই আদর্শ প্রতিষ্ঠান। কলেজ কর্তৃপক্ষের দাবী সারা দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে এখানকার লাইব্রেরীতেই মীর মশাররফ হোসেন সম্পর্কীত বেশি বই আছে। বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক ড: শামসুজ্জামানসহ বহু খ্যাতিমান পুরুষ কলেজ ও লাইব্রেরী ঘুরে দেখে প্রসংশা করেছেন।
এসব বিবেচনায় সরকার মীর মশাররফ হোসেন কলেজ জাতীয়করনের সিদ্ধান্ত নেয়। সরকার ঘোষিত জাতীয় করনের ১৯৯টি কলেজের মধ্যে মীর মশাররফ হোসেন কলেজ ছিল ৮ নং। কলেজটি জাতীয় করনের ঘোষনা শুনে সারাদেশের সাহিত্য প্রেমিসহ রাজবাড়ীবাসী আনন্দে উদ্দেলিত হয়েছিল। সাধুবাদ জানিয়েছিল সরকারের মহতী উদ্যোগকে।
সেই আনন্দের রেশ কাটতে না কাটতেই আনন্দ ম্লান হয়ে গেল। নতুন প্রজ্ঞাপন এলো মীর মোশাররফ হোসেন কলেজ জাতীয়করনের সম্মতি বাতিল। সিনিয়র সহকারী সচিব আব্দুল মান্নান স্বাক্ষরিত প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের স্বারক নং ০৩.০০১.০০০.০০.০০.০১.২০১৬-৪২ তাং ২৫ জুলাই ২০১৬এর প্রজ্ঞাপনে এ ঘোষনা প্রদান করা হয়। হাতে হাতে এই ঘোষনার কপি জেলার সর্বত্র ছেয়ে গেলেও কলেজ কর্তৃপক্ষ এখন পর্যন্ত কোন চিঠি পায়নি। তবে তারা উদ্বিগ্ন।
কালজয়ী উপন্যাস বিষাদ সিন্দুর রচয়িতা, মুসলিম বাংলাসাহিত্যের দিকপাল মীর মশাররফ হোসেনের স্মৃতি অম্লান রাখার জন্য মীর মশাররফ হোসেন কলেজটি জাতীয় করনের তালিকা থেকে বাদ না দেওয়ার জন্য এলাকাবাসীসহ ছাত্র-শিক্ষকগন প্রধানমন্ত্রীর সুদৃষ্টি কামনা করেছেন।
মীর মশাররফ হোসেন কলেজের অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) কামাল হোসেন খান বলেন, এখানকার শিক্ষার পরিবেশ ও মীরের স্মৃতি অম্লান করে রাখতে কলেজটি সরকারী করা হোক এ দাবী এখন সর্বজনে পরিনত হয়েছে।
এ ব্যাপরে বাংলাদেশ অনলাইন মিডিয়া এসোসিয়েশন-বিওএমএ‘র আহবায়ক. লালন গবেষণা একাডেমী ও ঢাকা টিভির চেয়্যারম্যান. বাংলা-নিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকম-এর সম্পাদক. বঙ্গবন্ধু পদকপ্রাপ্ত ব্যক্তিত্ব আলতাফ মাহমুদ বলেন, কি ব্যাপারে বা কোন কাল হাতের থাবায় সোনাপুর মীর মশাররফ হোসেন ডিগ্রী কলেজ প্রধানমন্ত্রীর জাতীয়করন ঘোষনার পরও সেটি স্থগিত হয়-তা আমাদের খুঁজে দেখতে হবে।
তিনি এ ব্যাপরে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শিক্ষামন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করে তরিৎ ভাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষনা বাস্তবায়ন করে সোনাপুর মীর মশাররফ হোসেন ডিগ্রী কলেজ জাতীয়করন করার দাবি জানান।