স্পোর্টস ডেস্ক, ২৫ জুন, ২০১৬ইং (বাংলা-নিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকম): কোপা আমেরিকার শতবর্ষী আসরকে স্মরণীয় করে রাখতে পুরোপুরি প্রস্তুত লিয়নেল মেসির নেতৃত্বাধীন আর্জেন্টিনা। আর এই লক্ষ্যে দেশকে ২৩ বছর পরে বড় কোন শিরোপা উপহার দিতেও মেসি বাহিনী দারুনভাবে মুখিয়ে আছে। একইসাথে এই প্রজন্মের সর্বশ্রেষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে নিজেকে আরেকবার প্রমানের সুযোগটিও এবার শিরোপা জয়ের মাধ্যমেই উৎযাপন করতে চান মেসি।
মেসির কোটি ভক্ত অবশ্য একথা অকপটেই স্বীকার করে ফেলেছেন পাঁচবারের বিশ্ব সেরা এই খেলোয়াড় সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ দুই ফুটবলার পেলে ও দিয়েগো ম্যারাডোনার কীর্তিও ইতোমধ্যেই ছুঁয়ে ফেলেছে। বার্সেলোনার সুপারস্টারের ক্যারিয়ারে এখন শুধুমাত্র প্রয়োজন আর্জেন্টিনার জার্সি গায়ে একটি মেজর শিরোপা অর্জন। এতদিন পর্যন্ত সেটা যে কেন হয়নি সেটাকেও অনেকেই দূর্ভাগ্য বলেই মনে করতে চান।
ইস্ট রাদারফোর্ডের এনএফএল’এ নিউ ইয়র্ক জায়ান্টসদের হোম গ্রাউন্ড মেটলাইফ স্টেডিয়ামে রোববারই এসব কিছুকে ভুল প্রমান করতে পারে আর্জেন্টিনা। কোপা আমেরিকার ফাইনালে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন চিলিকে হারাতে পারলেই সেই অর্জন সম্ভব। গত বছরও কোপার ফাইনালে এই দুই দলই একে অপরের মুখোমুখি হয়েছিল যেখানে শেষ হাসি হেসেছিল স্বাগতিক চিলি। গত তিন বছরে এই নিয়ে তৃতীয়বারের মত মেসি ও তার সতীর্থরা বড় কোন টুর্ণামেন্টের ফাইনালে খেলার যোগ্যতা অর্জন করলো। কিন্তু ২০১৪ সালের বিশ্বকাপে জার্মানী ও পরে চিলির কাছে কোপা আমেরিকায় স্বপ্ন ভঙ্গের পরে এবার আর কোন ভুল করতে চায়না জেরাডো মার্টিনোর শিষ্যরা। দুটি আসরেই সব সমালোচনার তীর ছিল মেসিকেই ঘিড়ে। দলের সেরা খেলোয়াড় ও অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্বটা তার উপরই বর্তায়। সমালোচকরা একথা বলতেও ছাড়েনি, তার মধ্যে দেশপ্রেমের অভাব রয়েছে, সে জাতীয় সঙ্গীত গায়না, জাতীর দলের জার্সির জন্য তার কোন ধরনের অনুভূতি নেই।
এদিকে আর্জেন্টাইন কিংবদন্তী ম্যারাডোনাও কোপা আমেরিকার শুরুতে মেসি সম্পর্কে বলেছিলেন, তার মধ্যে ‘ব্যক্তিত্ব’ ও ‘নেতৃত্বের’ অভাব রয়েছে। সেমিফাইনালে স্বাগতিক যুক্তরাষ্ট্রকে ৪-০ গোলে উড়িয়ে দিয়ে ফাইনালের টিকেট নিশ্চিত করার পরেও ম্যারাডোনা বলেছিলেন, রোববারের ফাইনালে আমাদের অবশ্যই জেতা উচিত। আর যদি আমরা জিততে না পারি তবে পুরো দলের দেশে ফেরা উচিত নয়।
যদিও মেসি এসমস্ত সমালোচনা কখনই রাগান্বিত হননি। এক সাক্ষাতকারে সম্প্রতী তিনি বলেছেন, ‘কোন ধরনের চিন্তাভাবনা না করেই যে সমস্ত মানুষ অন্যকে আক্রমন করে তাদের নিয়ে আমি চিন্তিত। গত দুই বছরে আমরা দুটি ফাইনালে খেলেছি কিন্তু জিততে পারিনি। এখানে কি করার আছে, দল ফাইনালে তো খেলেছে। এমন নয় যে আমরা শেষ ১৬ তেই পরাজিত হয়েছি।’
এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে আর্জেন্টিনার ম্যাচগুলোতে মেসির মধ্যে প্রত্যাশার কোন চাপ লক্ষ্য করা যায়নি। নিজের স্বাভাবিক ফর্ম ধরে রেখেই তিনি দলকে ফাইনালে খেলার নিশ্চয়তা এনে দিয়েছেন। ফাইনালের প্রতিপক্ষ চিলির বিপক্ষে গ্রুপের প্রথম ম্যাচে ২-১ গোলে জয়ী হয়ে কোপার মিশন শুরু করে আর্জেন্টিনা। সেই ম্যাচে ইনজুরির কারনে খেলতে পারেননি কাতালান সুপারস্টার। কিন্তু পরের ম্যাচেই পানামার বিপক্ষে বদলী হিসেবে মাঠে নেমেই হ্যাটট্রিক তারপর কোয়ার্টার ফাইনালে ভেনেজুয়েলার বিপক্ষে ৪-১ গোলের জয়ী ম্যাচে গোল করে গ্যাব্রিয়েল বাতিস্তুতার সাথে জাতীয় দলের জার্সি গায়ে সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ড স্পর্শ করেন। মঙ্গলবার আবারো যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে সেমিফাইনালে দূর্দান্ত এক কার্লিং ফ্রি-কিকে গোল করে সর্বমোট ৫৫ গোলের রেকর্ড নিয়ে বাতিস্তুতাকে ছাড়িয়ে যান। পরবর্তীতে সতীর্থদের দিয়ে করিয়েছেন আরো দুই গোল। সব মিলিয়ে এবারের আসরে মেসির ফর্ম আর্জেন্টিনাকে শিরোপার স্বপ্নে বিভোর করে তুলেছে। আর মেসিও মনে করেন এই শিরোপাটা এবার তাদেরই প্রাপ্য।
